প্রথম প্রকাশঃ
ঘটনার পারম্পারিকতা দেখলে মনে হয়, এ যেন দৈব নির্দেশিত। গত ১০ দিনে আমি সংখ্যালঘু (আমি এ শব্দটি অপছন্দ করি, কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটাই বোঝানোর জন্য সহজ শব্দ) ও ভিন্ন ধরণের মানুষদের সাথে ঘতে চলা বৈষম্যের প্রতি আমাদের মেইন্সট্রিম সমাজের তরুণেরা কতটা অবিবেচক, তার কয়েক রকম চিত্র দেখে ফেলেছি।
প্রিয়া সাহার ঘটনা বিস্তারিত বলার কিছু নেই। তবে এতে লাভ একটা হয়েছে। বাংলাদেশের যারা এসব বিষয়কে গুরুত্বহীন মনে করতেন, এমন অনেকেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের তথ্য-উপাত্ত দাবী করছেন। এর ফলে অধ্যাপক আবুল বরকতের দীর্ঘদিনের গবেষণা নতুন করে সবার সামনে উঠে আসছে, আলচনা শুরু হচ্ছে। আর ঘুমিয়ে থাকা যাচ্ছে না।
যাকগে, যা বলছিলামঃ প্রিয়াবালার এ ঘটনার কিছুদিন আগেই আমি আরেকটি অভিজ্ঞতা দিয়ে জেনেছিলাম, আমাদের দেশে বৈষম্য নিয়ে অধিকাংশ মানুষের ধারণা কী। সেই দিনটি আমার শিক্ষকতা জীবনের এক লাল-অক্ষর দিন হিসেবে থেকে যাবে।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লিগাল সিস্টেম অফ বাংলাদেশ পড়াই। আমার ক্লাসে প্রায় ১৮০ জন শিক্ষার্থী, এবং তারা বাংলাদেশের নানাপ্রান্ত থেকে আসে। তারা মোটামুটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর, বিভিন্ন এলাকার, বিভিন্ন অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে। আমার ক্লাসটা আসলে একটা মিনি বাংলাদেশ। আমার এই ক্লাসের দিকে তাকালেই বোঝা সম্ভব, গোটা বাংলাদেশে কী হচ্ছ, মানুষ কী ভাবছে, কীভাবে ভাবছে।
আমার কোর্সটির উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা, এর ঐতিহাসিক পটভূমি, এর সমস্যা, বাস্তবতা এসব দিক সম্পর্কে জানানো। আমি যেহেতু সোশিও-লিগাল দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ করি, তাই আমার ক্লাসের একটা বড় অংশ থাকে সামাজিক বিভিন্ন বিষয় আইনের সাথে কীভাবে লেন-দেন করে তার বিশ্লেষণ। সেই সূত্রে ক্লাসে আলোচনা হচ্ছিল ১৯৪৯ এ পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রণীত অব্জেক্টিভ ফ্রেমওয়ার্ক, বা সংবিধানের মূলভিত্তি। এই ফ্রেমওার্কে খুব পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছিল যে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির সামগ্রিক আইন ব্যবস্থা হবে ইসলাম ধর্মানুযায়ী, মুসলমান নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও গণজীবন চলবে ধর্মমতে, এবং অমুস্লিম নাগরিকদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতা থাকবে, কিন্তু তারা কখনও রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।(পরবর্তীতে সংবিধানে পরিবর্তন আসলেও মূল্ধারা এক-ই আছে, সেটা ভিন্ন আলোচনা)। পাকিস্তানের শুরুর দিকে এমন একটি দলিলের তীব্র সমালোচনা এসেছিল পূর্ব পাকিস্তানের, বিশেষ করে ঢাকা জেলার পরিষদ সদস্যদের, মাঝ থেকে। তারা বলেছিলেন যে, অমুসলিম পাকিস্তানি নাগরিকরা এমন একটি দলিলের ফলে সমমর্যাদা থেকে বঞ্চিত হবেন, এবং এতে কায়েদে আযম না বরং উলেমাদের প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে।
আমি সরাসরি সেই আলোচনায় না গিয়ে, ফ্রেমওার্কের মূল ধারাগুলি ক্লাসে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কেউ কোন সমস্যা খুঁজে পায় কি না।
মাত্র ২ জন ছাড়া, ১৬০ জনের ক্লাসে কেউ কোন সমস্যা খঁুজে পায় নি। একজন বলেছে, ম্যাম, আমি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও যদি সমাজের ঠিক করা পদ্ধতিতে ধর্মচর্চা না করি, তাহলে আমার কি শাস্তি হবে না? আরেকজন বলেছিল, ম্যাম, অমুসলিম কেউ যোগ্য হলে কেন তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন না?
এর প্রতি উত্তরে ক্লাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বললেন, মুসলিমের একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে, কাজেই কেউ যদি ঐ মত ধর্মচর্চা না করে, তাহলে সে মুসলিম হতে পারবে না। অন্য বিষয়ে বললেন, পাকিস্তানের আইন এটাই, এটা মানতে না চাইলে পাকিস্তানে না থাকলেই হয়।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলাম। টানা ৩০ মিনিট চেষ্টা করেও, নানারকম হিন্ট দিয়েও তাদের মধ্যে থেকে এমন কোন প্রতিক্রিয়া আনতে পারিনি, যে একটি রাষ্ট্রে নাগরিকদের জন্য দুইরকম মানদন্ড থাকা উচিত না।
আমি তারপর (যারা যারা বলেছিলেন যা তারা কোন সমস্যা দেখছেন না) তাদের জিজ্ঞাসা করলাম তারা কখনও DISCRIMINATION বা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কিনা। সবার উত্তরঃ না। তাদের সবাই ছিলেন মুসলমান, পুরুষ, এবং বাঙালি। বাংলাদেশের পটভূমিতে identity marker এর হিসেবে এরা সবাই প্লাস প্লাস প্লাস, এদের বৈষম্যের শিকার হওয়া আসলেই একটু কঠিন।
হয়ত সত্যই হন নি, অথবা হলেও সেটা বৈষম্য ছিল তারা তা বোঝেননি। ক্লাসের শেষে কেবল একজন আদিবাসি ছেলে এসে আড়ালে বলল, ম্যাম, আমি এর শিকার, কিন্তু ক্লাসে বলতে ভয় লেগেছে, কারণ সবাই আমাকে অন্য চোখে দেখবে। আমি আরেকটু বড় হই, তারপর এগুলো নিয়ে কথা বলব।
আমার জন্য এটা মানা অসম্ভব যে আইনের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা সম্পর্কে পরীক্ষা লিখে পাশ করে যাবে কিন্তু বৈষম্য কী তা চিহ্নিত করতে পারবে না। বিকাল থেকে অসম্ভব রকম খিচড়ে আছে মন-মেজাজ।
আমি ভেবে দেখলাম, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাকগ্রাউন্ডে হলোকস্ট, স্লেভারি এসব বিষয়ের গল্প বলা হয়ত সবচেয়ে এফেক্টিভ না। তাই পরেরদিন রিভার্স পদ্ধতিতে ক্লাস নিলাম। কানাডা, ফ্রান্স আর চীনের ৩টি আলাদা আআলদা ঘটনা আলোচনা করলাম, যেখানে মুসলিমরা হয় ধর্মীয় পোশাক পরতে বাঁধা পাচ্ছেন, বা স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করতে পারছেন না। প্রশ্ন করলাম, এগুলো কী বৈষম্য? সমস্বরে উত্তরঃ হ্যাঁ!
প্রশ্নঃ এগুলো বৈষম্য হলে, ১৯৪৯ এর পাকিস্তানের ঐ ফ্রেমওয়ার্ক কেন বৈষম্য না?
উঃ মিস, এখানে তো মুসলিমদের বাঁধা দেয়া হচ্ছে, আর ঐ ফ্রেমওয়ার্কে তো মুসলিমদের ধর্ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। আর অমুসলিমদের ধর্মচর্চার স্বাধীনতা দিয়েছে।
প্রশ্নঃ চাপিয়ে দেয়াটা কি ঠিক?
উঃ হ্যাঁ, কারণ মুসলিম মাত্রই ধর্মপালনে বাধ্য।
প্রঃ এই যে মুসলিম আর অমুস্লিমদের আলাদা স্ট্যান্ডার্ড করে দিল এটা কি ঠিক?
উঃ হ্যাঁ, কারণ হিন্দু-মুসলিম তো আলাদা আলাদা জাতি।
প্রঃ তাহলে ফ্রান্সের হিজাব নিষেধাজ্ঞা কেন বৈষম্য? ওরা বরং সকল ফরাসি নাগরিকদের এক কাতারে এনে বলেছে, সবাই একভাবে চলবে। তার মানে সবাই এক, রাইট?
উঃ না, এতে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকে না।
প্রঃ আর পাকিস্তানে যখন একজনের ওপর ধর্ম মানতে হবে বলে সংবিধান চাপিয়ে দিচ্ছে, সেটা কি ঠিক? সে তখন ধর্ম পালন না করলেই তো সেটা অসাংবিধানিক এবং বেয়াইনি হয়ে যাবে?
উঃ না এতে সমস্যা নেই, কারণ মুসলমান মাত্রই এগুলো করতে বাধ্য।
প্রঃ আচ্ছা, এমন কী হতে পারে, যে কাজগুলো তোমাদের করতে সমস্যা হবে না বলে ভাবছ, সেগুলো অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়াটা বৈষম্য মনে হচ্ছে না, আর যে কাজ তোমার ওপর চাপিয়ে দিলে তোমার অসুবিধা হবে বলে জান, সেটাকে বৈষম্য মনে হচ্ছে?
উঃ (নিশ্চুপ। কয়েকজন ধীরে ধীরে মাথা নাড়ছে।)
এই হচ্ছে আমাদের আজকের তরুণ সমাজ। এরা ছোট থেকে এমন সমাজে, এমন পরিবেশে বড় হচ্ছে, যেখানে নিজের সুবিধাকে বড় করে দেখা হয়। যেখানে আমার চেয়ে যে আলাদা, তার (অধিকার দূরের কথা) সুবিধার কথা ভাবার দরকার নেই। আমার সুবিধা করে তারপর অন্যের সুবিধার কথা ভাবা যাবে। অন্যের সুবিধা করতে গিয়ে আমার অস্বস্তি হলে সেই সুবিধা দেয়া যাবে না। অন্যের জায়গায় নিজেকে রেখে ভাবার প্রশ্নই উঠে না।
সেই দেশে, একজন প্রিয়া সাহা যখন একটি বাস্তব কথা বলে ওঠেন (তিনি কীভাবে বলেছেন, কার কাছে বলেছেন, কখন বলেছেন, কোন যোগ্যতায় বলেছেন, সেগুলো নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, যেটা তর্কাতীত তা হল হিন্দুরা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং হচ্ছে); তখন যে সবাই তাঁকে অবিশ্বাস করবে, সবাই তাঁকে দুয়ো দেবে, এতো সহজ বাস্তবতা।
সত্য হল, এটাই এখনকার বাংলাদেশ। এরাই ৫ বছর পর বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট, উকিল আর আইনপ্রণেতা হবে।
সেই দেশে সংখ্যালঘুরা থাকবে, এ আশাই তো দুরাশা। মাঝে দিয়ে, আমাদের মত মানুষ, যারা আমরা ছোট থেকে কেবল মানুষ চিনেছি, হিন্দু-মুসলমান না, তারা হেরে যাব।
No obstante, en muchos pacientes con disfunción eréctil de origen orgánico se añade un componente psicológico (ansiedad por el rendimiento) que la agrava.
Cephalexin is an antibiotic that belongs to the family of medications known as cephalosporins.
Hablar con la pareja sobre el problema, o buscar consejo y apoyo externo puede ayudar.
Men with male pattern hair loss have more DHT in the balding part of their scalp than in other parts, resulting in increased hair loss.