২০১৮ সালে পাকাপাকিভাবে আমার বিষণ্ণতার এক দশক পূর্ণ হল। এর আগেও অনেকবার ভেবেছি যে এটা নিয়ে লিখব, কথা বল্ব, কিন্তু আটকে যেতাম। ভেবে রেখেছিলাম, লিখব, যখন ঠিক সময় আসবে? কিন্তু সেদিন হঠাতি যেন বুঝতে পারলাম, ঠিক সময় কখনই আসবে না। তাই আজ বিষণ্ণতার কথা লিখতে বসেছি। বিষণ্ণতা, যার কথা আমি কখনও জানতাম না। যার সাথে আমার কোন পরিচয় ছিল না। যা এখন আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী। আমার পরিবার, বন্দুবান্ধব, এমনকী আমার জীবনসঙ্গীও মাঝে মাঝে সঙ্গ ছেড়ে দেয়, কিন্তু বিষণ্ণতা আমার সঙ্গ ছাড়ে না।
আজ মনে পড়ে, সেই প্রথম মুহূর্ত যখন বিষণ্ণতা, বা “বি”, আমার জীবনে ঢোকে। জীবনে যখন খুব বড় ঘটনা ঘটে, তখন আকাশে বাতাসে একটা তোলপাড় হয়। সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড যেন জানে সে আসছে। আমার বেলায় হয়েছিল। কিন্তু তখন বুঝিনি। বরাবরের মত, সেবার আমার বুঝতে বুঝতে বড্ড দেরী হয়ে গেল।
ঘটনার সূত্রপাত আরও আগে, কিন্তু আজ পেছনে তাকালে যেন ঠিক ধরে নিতে পারি কোন মুহূর্তে আমার জীবন চিরদিনের মত বদলে গেল। আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম। যে ক্লান্তি আমাকে আচ্ছন্ন করে ছিল, তা সাধারণ ক্লান্তি নয়। সে ক্লান্তি আমায় অচল করে দিয়েছিল। সে ক্লান্ত অবস্থায় বি এসে ঢুকল আমার মাঝে। না, আকাশ কালো করে আসে নি, বিদ্যুৎ চমকে নি। কড়া রোদ ছিল। বৈধাখের মাস তো, রোদ না থেকে যায় কীভাবে। কিন্তু, আমার সমস্ত শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে, আমার বুকের ভেতর হাজার মণের ওজন বসিয়ে, বুকের ভেতরটা থেঁৎলে দিয়ে কীজানি একটা হয়েছিল। সেটাই ছিল বি এর আগমন। নতুন সত্তা পৃথিবীতে আসলে যেমন নারীর পুরো শরীর ছিঁড়ে যেতে চায়, আমার ভেতরে বি ধোকার সময় আমার সব ছিঁড়ে গিয়েছিল তেমনি করে। আর কেবল যে একজন এসেছিল তা নয়, আমার হাসিখুশি যে সত্তা, সে সমস্ত ধ্বংস করে বিদায় নিয়েছিল সেদিন।
কেমন করে কেটে গেল এই দশ বছর?
দেখতে দেখতে “বি” আমার শরীরের, আমার অস্তিত্বের একটা অংশ হয়ে গেল। বি যেভাবে আমার অংশ হল, একইভাবে আমাকে দুইভাগে কেটে ফেলল। যেকোন মুহূর্তে আমি দুভাগ হয়ে থাকি। আমি বই পড়ছি, লেকচার বানাচ্ছি, রিসার্চ পেপার লিখছি, প্রজেক্ট প্রোপোজাল বানাচ্ছি, পারবারিক অনুষ্ঠানে আছি, মিটিং করছি, আমি কোনখানেই সম্পূর্ণ নেই। আমার এক অংশ মন দেয়ার চেষ্টা করছে, আরেক অংশ পুরোপুরি ‘brain-locked’ অবস্থায়। এই অংশ কিছু ভাবতে পারে না, কিছু চিন্তা করতে পারে না। আমি একটা গোলক ধাঁধাঁয় ঘুরে ঘুরে বেড়াই। আগে ভয় পেতাম। এখন মেনে নিয়েছি। এটাই আমার জন্য স্বাভাবিক।
পরিহাসের ব্যাপার এই যে, এর মধ্যে কখনও যদি হঠাত কিছু একটা ভালো লেগে যায়, তখন যতটা না আনন্দ হয়, তার চেয়ে বেশি হয় অপরাধবোধ। ‘কেন আমার ভাল লাগছে? আমি কী এমন করেছি যে আমার আনন্দ হবে? এই আনন্দ তো আমার প্রাপ্য নয়। আমার তো খুশি হওয়া উচিত নয়।’ তাই অন্ধকার ঘরের পর্দার ফাঁক দিয়ে কখনও যদি বা এক চিলতে সোনালি আলো উঁকি দেয়, নিজেই অনেক সময় সেই আলো গলা টিপে মেরে ফেলেছি।

দশ বছর পর এখন আর আলোকে মারতে হয় না। আলো আর আমার মনের আঁধার পাশাপাশি থাকে। কোন শত্রুতা নেই। আলো যেমন জেনে গিয়েছে তার সাধ্য নেই আমার মনে আনন্দ জাগানোর, আমিও জেনে গিয়েছি আলো থেকে পাওয়া এক চিলতে আনন্দ আমার আঁধার দূর করতে পারবে না। বিষণ্ণতাও তাই আর ভয় পায় না। জানে যে সে তার জায়গায় নিরাপদ। আমি কতটা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েছি, তা বোধ হয় আমি নিজেও জানিনা। তবে এখন ঐ আনন্দকে আমি স্বাগত জানাই। জীবনে কী-ই বা আর আছে। জানালার পেছনে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি আলো দেখছি, এটা তো আর কেউ দেখে ফেলবে না। তাহলে আর সমস্যা কি!
এই দশ বছরে “বি” লুকিয়ে থাকত, ঘাপ্টি মেরে। আমাকেও তাল মেলাতে হত। বুকের ভেতর ব্যাথা, মাথা ভারি, শরীর ভারি, হাঁটতে ইচ্ছা করছে, চেয়ারে বসলে আর দাঁড়াতে ইচ্ছা করছে না, তারপরও লেকচার দিয়ে যাচ্ছি। লিখতে ইচ্ছা করছে না, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে, তারপরও কি-বোর্ড টিপে যাচ্ছি। রাস্তা পার হওয়ার সময় একবার গাড়ির সাথে ওড়না আটকে ফাঁস লাগতে গিয়েছিল। খেয়াল করিনি কখন এমন হল। একবার বাসের সাথে ধাক্কা লাগতে গিয়েছিল হার্ভার্ড স্কোয়ারে। গালিও খেয়েছিলাম ড্রাইভারেরঃ ‘অন্ধ নাকি’? আমি ‘সরি’ ছাড়া আর কিছু বলতে পারিনি। মাঝে মাঝে চুল ব্যথা করত।
মনে আছে, সেবার সবাই নাচছে, আমি এক কোনায় বসে তুষারপাত দেখছিলাম। মনে হয়েছিল ওটাই আমার স্থান। হাসি নাচ গানের ভেতর আমার না আছে অধিকার, না জায়গা।
কেন অধিকার নেই? কারণ চারিদিকে তাকিয়ে দেখঃ কত মানুষ কত কাজ করছে! আমার এক বন্ধু, রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা করছে। একজন মিছিলে যেয়ে মার খাচ্ছে। একজন বানাচ্ছে টিভিসি। একজন বই লিখছে। একজন নিজের হাতে দোকান সাজাচ্ছে। জীবন কাজে ভরপর। সেখানে তুমি কাজ করছ না, মন খারাপ করে বসে আছ, কেন তোমার জায়গা হবে এই পৃথিবীতে? না না নেই, তোমার জায়গা তাই তোমার ঘরে, তোমার বিছানার কোণে। কেউ তোমাকে ডাকবে না, কারণ তুমি কাজ কর না।
গ্র্যাজুয়েশনের দিন সার্টিফিকেট হাতে যখন স্টেজে দাঁড়াতে হয়েছিল, মনে হচ্ছিল পড়ে যাব, এত চাপ হচ্ছিল শরীরের ওপর। শক্তির সর্বশেষ কণাটা দিয়ে সেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম। নেমে এসে দেখি প্রফেসর আমাকে বলছে ‘কংগ্র্যাচুলেশন’। আমি কোন মতে ধন্যবাদ দিয়ে পালালাম, যেন আমার কান্নাভেজা বিকৃত চেহারা তার চোখে না পড়ে। সার্টিফিকেটের পরেই যেতে হল লাঞ্চে। মাবাবাকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর সুযোগ বুঝে পালিয়ে গেলাম ওয়াশরুমে। দরজা লাগিয়ে বসে বসে প্রায় ২০ মিনিট কেঁদেছিলাম। পুরো শরীরের ওপর যেন একটা হাতি বসেছিল। আমাকে মাটিতে টানছিল শুয়ে ফেলে দেবার জন্য। তার আগের দিন ছিল ল’ স্কুলের আলাদা অনুষ্ঠান। আমি কাজে ছিলাম। কাজ থেকে সোজা নিজের ঘরে ফিরে শুয়ে ছিলাম। মাবাবা ছিল অনুষ্ঠানে/ আমাকে ফোন-অ করেছিল আসছি না কেন। আমি ফোন ধরিনি। মনে হচ্ছিল, ঐ বাইরের পৃথিবীতে আমার দরকার নেই। আমি আমার ঘরেই বেশ আছি। এই আমার লক্ষণরেখা। এর বাইরে গেলে আমার না, পৃথিবির বিপদ। আমি চুপটি করে থাকি, তাতে কার কোন সমস্যা হবে না। কতই না লুকোচুরি।
এক দশক পর আর লুকাতে হয় না। আমরা থাকি পাশাপাশি। “বি” জিতে গিয়েছে, আমি ওকে মেনে নিয়েছি। এখনও কাজ করতে সমস্যা হয়, কষ্ট হয়, কিন্তু এই কষ্টটাই আমার জন্য স্বাভাবিক। আখন মন দিতে পারি না, যুদ্ধ করতে হয়। এই যুদ্ধ করে মন দেয়াটা আমার বাস্তব। যার কাজ শরীরের নয়, মনের শক্তির, যার কাজে হাত পায়ের চেয়ে মস্তিষ্ক আর মুখের ব্যবহার বেশি, যার কাজে চুপচাপ কাজ করার অবকাশ নেই, যে নিজের ঘরে বসে নয় বরং রোজ ১০০টা মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কাজ করে, তার সাথে বিষণ্ণতার জমেছে ভালো।
এ এক দশকে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমার সর্বসময়ের সাথী বিষণ্ণতা যে আমার ভহড়ং বই আর কিছু না, আমি যে ঢং করতে ওস্তাদ, তা আমার নিকটজনের কাছ থেকে অনেকবার শুনেছি। পাশাপাশি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অন্যান্য আত্মীয়ের কাছেও শুনতে হয়েছে। আমার চেয়ে আমার মাবাবা লজ্জা পেয়েছে বেশি। এখন দশ বছর পর আর কিছু মনে হয় না। বিষণ্ণতার সাথে সম্পর্কটা একান্তিও আমার। এর মাঝে আর কেউ আর আসতে পারে না। একটা সময় ভাবতাম আমার বড় হয়ত পারবেন। বিষণ্ণতা ভারী আবেগী, আমার বর-ও এ দূরত্ব ঘোচাতে পারে নি।
এই বিশাল বড় পৃথিবীতে আমরা যে খুব একা, এই ধারণাটা বিষণ্ণতা না থাকলে বোঝা যায় না। অনেকেই কত বড় বড় কথা ভাবে, ‘আমি বিশাল বড় কাজ করে ফেলেছি, আমি বিশাল কিছু হয়ে গিয়েছি’। তাঁদের অনেকে আসলেই হয়ত করেছে, কিন্তু বেশিরভাগ-ই করে নি। সেটা তাঁরা বুঝে না। বিষণ্ণতা একদম চোখে হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয় ‘তুমি কিছুই নও, তুমি কিছুই কর নি। তুমি কেবল একটা শরীর, মাটিতে যাবার সাথে সাথে পৃথিবী থেকে একটা শরীর কমবে।’ এটাই তো সার কথা। এই বিশাল প্বৃথিবীতে কে-ই বা কার। দিন শেষে আমরা সবাই যার যার পথে চলে যাই। এক ঘরে থেকেও আমরা নিজেরা নিজেদের জীবন কাটাই। কেউ কার জীবন কাটিয়ে দেয় না। যত তাড়াতাড়ি এটা বুঝে নেয়া যায় ততই মঙ্গল। বিষণ্ণতার এক দশক পূর্তিতে এই আত্ম-বোধন তাই হয়ত বিষণ্ণতার আমার প্রতি উপহার।
El tratamiento para la disfunción eréctil suele incluir, aparte de la medicación, cambios en el estilo de vida como por ejemplo dejar de fumar y practicar ejercicio de forma regular.
Cephalexin belongs to a class of antibiotics called cephalosporins.
Algunos medicamentos pueden facilitar la aparición también de esta patología.
The science behind this stems from testosterone, which is then converted into another hormone known as Dihydrotestosterone or DHT.